শিশুদের কোডিং শেখায় উৎসাহ দেবেন পোপ ফ্রান্সিস

“তিনি পাইথন খুব ভালো করে জানবেন, অন্তত এমন প্রত্যাশা করি না আমি।” --বলেন প্রকল্পের উদ্যোক্তা। “তবে, এটি শুরু করতে সহায়তার জন্য সার্টিফিকেট পাবেন তিনি।”


গোটা বিশ্বে শিশুদের আরও বেশি সংখ্যায় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। আর এ কাজে পোলিশ এক কোম্পানির পরিকল্পিত প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন তিনি।

‘কসমস এআই’ নামের এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মিরন মিরনিউক। কোডিং কীভাবে তার জীবনকে বদলে দিয়েছে, বিবিসি’র প্রতিবেদন বলছে, সেই অভিজ্ঞতাকে এই প্রকল্পে কাজে লাগাতে চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘কোড উইথ পোপ’ নামের এই প্রকল্পের সহায়তায় গোটা বিশ্বে চলমান ‘শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকট বৈষম্য’ কমে আসবে।

এ প্রকল্পে পোপের সম্পৃক্ততা সম্ভবত ক্যাথলিক দেশগুলোকে আকৃষ্ট করবে।

“আমাদের বিশ্বাস, পোপ এ প্রকল্পে যোগ দেওয়ায় তারা কোডিং নিয়ে কিছু সময় কাটানোর অনুপ্রেরণা পাওয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে প্রোগ্রামিং শেখার সুযোগটি লুফে নেবেন।” --বিবিসিকে বলেন মিরনিউক।

এই উদ্যোগের সহায়তায় ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে কোডিং শেখার সুযোগ পাবেন।

৬০ ঘণ্টার এই কোর্সে শিশুরা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কোডিং ল্যাংগুয়েজ পাইথনের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পাবে।

বিবিসি বলছে, ডিজিটাল যুগে পড়া ও লেখার মতোই মৌলিক চাহিদা হয়ে উঠছে প্রোগ্রামিং দক্ষতা।

এ বছর প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে’র ডেটা অনুসারে, প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট চাকরি এ সময়ের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল খাত।

তবে, বৈশ্বিকভাবে প্রযুক্তি দক্ষতার অভাব ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট কোটি চাকরির পদ পূরণে অপ্রতুলই থাকবে।

এর ফলে, উচ্চমানের প্রোগ্রামিং শিক্ষার চাহিদা বাড়ছে, বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। আর এগুলোর সিংহভাগ অধিবাসীই ক্যাথলিক।

পোল্যান্ডের জনগণের বড় একটি অংশ ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী।

৩৩ বছর বয়সী মিরনিউক বিবিসিকে বলেন, তিনি নিজের পোলিশ ঐতিহ্য ও প্রযুক্তি খাতে একজন সফল পোলিশ ব্যক্তি হিসেবে কাজ করতে পেরে গর্বিত।

প্রযুক্তি খাতে বড় অগ্রগতি দেখাচ্ছে পোল্যান্ড, বিশেষ করে এআই খাতে। আর গুগল ব্রেইন, কসমস এআই ও ওপেনএআইয়ের মতো কোম্পানিগুলোতেও যথেষ্ট সংখ্যক পোলিশ কর্মী রয়েছেন।

তবে, অনেক দেশই যে এমন ভাগ্যবান নয়। এ নিয়ে নিজের সচেতনতার কথাও বলেছেন মিরনিউক। আর তিনি আশা করেন, এই শিক্ষামূলক প্রকল্প এমন পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

সেবাটি পাওয়া যাবে স্প্যানীয়, ইংরেজি, ইতালীয় ও পোলিশ ভাষায়। অনুমান বলছে, ব্রাজিল বাদে গোটা দক্ষিণ আমেরিকার শিশুদের কাছে প্রকল্পটি ছড়িয়ে পড়বে। এ ছাড়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারা দেশগুলোতেও এটি পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে।

এবারই পোপ প্রথমবারের মতো শিশুদেরকে কোডিংয়ে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন-  এমন নয়। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের এক উদ্যোগেও কোডিংয়ের একটি লাইন লিখতে সাহায্য করেছেন তিনি।

বিবিসি বলছে, ভ্যাটিকানে পোপের সঙ্গে দেখা করবেন মিরনিউক। তবে, পোপ নিজে নতুন এই দক্ষতা অর্জন করে নিজের ছাত্রদেরকে সেটি অনুকরণ করতে বলবেন, এমন প্রত্যাশা নেই মিরনিউকের।

“তিনি পাইথন খুব ভালো করে জানবেন, অন্তত এমন প্রত্যাশা করি না আমি।” --বলেন মিরনিউক।

“তবে, এই প্রকল্প শুরু করতে সাহায্য করার জন্য সার্টিফিকেট পাবেন তিনি।”